gwRwk jLd xox«ËKËUk xdtìèËY AwìæxkKZwB G oioøw oiwcwËdk Dewt | ||
AaêiìèyËK cdøgwb RwdwËZB pt„ KwkY xZxd ÌowRwoweUw þñyKwk KkËld gwRwk GLd xox«ËKËUk xdtìèËY„ gwRwk okKwËkk xdtìèËY ÌdB„ xKvgw GhwËgI glw PËl, gwRwk xdtìèËYk lrwBËt okKwk eq xox«ËKËUk KwËQ ekwxRZ„ G ÌqË¢ okKwk eÖËkweÖxk gøaê„ Aaêiìèy MZ iŠlgwk kwRcwdyk GKxU ÌpwËUËl AwËtwxRZ ‘gwvlwËbËmk AaêdyxZk owóeÞxZK MxZeÞgwp’ mynêK ÌoxidwËk gËlËQd, ‘Aaêiìèy xpËoËg Awiwk eÞcwd xhmd pËâQ, gwRwk xdtìèY„ gwRwk GLd eÖËkweÖxk xox«ËKËUk xdtìèËY„ gwRwkËK xox«ËKËUk pwZ ÌaËK Ìgk KËk AwdËZ pËg„ xox«ËKËUk xgkØ˦ Ky gøgþÿw Ìdtw jwt ÌoUwB GLd hwgxQ„’ gwRwk xdtìèËY okKwk Ìj eÖËkweÖxk gøaê Ggv gwRwk Ìj eÖËkweÖxk PËl ÌMËQ xox«ËKËUk xdtìèËY Zw owóeÞxZK gwRwk-eÞgYZw, xgËmn KËk PwËlk gwRwËk bwi ÌgËr Plwk bweU ÌbLËlB AwëbwR-AdÖiwd KkËZ KwËkw AoÖxgcw pItwk Kaw dt„ xdZøeÞËtwRdyt Adøwdø eËYøk owËa PwËlk bwi AþñwhwxgK ÌgËr PËlËQ„ eÞxZxbdB PwËlk bwi gwrËQ„ iwoLwËdK AwËMI Ìj PwËlk bwi 30-32 UwKw xQl, Zw GLd xgx¢ß pËâQ 42-43 UwKwt„ GKB pwËk ÌgËrËQ AxZ owcwkY iwdÖËnk LwbøeYø ÌiwUw PwËlk bwi„ Aaêiìèy Zw þñyKwk dw KkËlI owcwkY iwdÖn gwRwk xP¢Uw xVK xVKB AdÖcwgd KkËZ ewkZ„ oÖËLk Kaw, G ÌqË¢ Aaêiìèy þñyKwk KËkËQd gwRwk xdtìèËY okKwËkk gøaêZw kËtËQ„ G gøaêZwk xgntxU xgËgPdwt ÌkËL xdËiêwp ebËqe xdËl xdZøeËYøk bwi þñwhwxgK ejêwËt kwLw LÖg AoÖxgcw pËg dw gËlB Awikw iËd Kxk„ okKwk G gøwewËk AwìæxkK ebËqe xdËt GxMËt AwoËg gËlB AwiwËbk xgmðwo„ GkB iËcø cwd-Pwl iRÖb gËìc Ggv PwËlk bwi AþñwhwxgKhwËg ÌgËr Plw ÌVKwËZ gwvlwËbm gøwvK gøgowtyËbk FY xgZkËYk dyxZiwlw KËVwkZk KËkËQ„ GLd ÌaËK xil iwxlKkw bÖB iwo Ggv cwd gøgowtykw Ìbr iwËok Ìgxm oiËtk Rdø gøwvK ÌaËK FY xdËZ ewkËgd dw„ AwËM G oitoyiw xQl xZd iwo„ G DËbøwM iRÖbbwxk eÞgYZw xKQÖUw pËlI KiwËg„ ZËg ÂcÖ GB DËbøwMB gwRwk xdtìèËY jËaÄ gËl cËk xdËl hÖl Kkw pËg„ okKwkËK ÌhËg ÌbLËZ pËg, ÌKd okKwk MZ GK gQËkkI Ìgxm oiËt gwRwËk xox«ËKU hwOËZ gøaê pËlw? Awk Kwkw MËr Z×ËlËQ Gog xox«ËKU? okKwkËK xdËiêwp ejêwËlwPdwt dwiËZ pËg, Ky Ky ebËqe xdËl gwRwËk BËZwiËcøB eÞxZxÅZ xox«ËKËUk Agowd NUwËdw jwt„ G ÌqË¢ oËPZdhwËg iËd kwLËZ pËg, okKwxk bËlk NxdÅ ÌKwËdw eÞhwgmwly ipl G xox«ËKU MËr Z×ËlËQ xK dw„ jxb ÌZidxU NËU ZËg okKwkËK RwZyt þñwaê xgËgPdw KËk blyt þñwËaêk EËcµê DËV ZwËbk xgkØ˦ gøgþÿw xdËZ pËg„ dBËl Aaêiìèy jw-B glÖd, xox«ËKU hwOw Ggv ÌoB oÔË¢ gwRwkËK oÖÅ× xdtìèËY Awdw Zwk eËq oºg pËg dw„ AZyËZ G ckËdk xZ£ß AxhšZw awKwk KwkËYB G gøwewËk AwMwi ovmt AwiwËbk gwcø pËt eÞKwm KkËZ pËtËQ„ Awikw PwB Aaêiìèy Zwk gwRwk xdtìèËY AwìæxkK Ìpwd, Zwk Ìdtw AwìæxkK ebËqe oÔË¢ gwRwkbk þñwhwxgK ejêwËt ÌdËi AwoÖK„ owcwkY iwdÖn eYøiÔËløk ewMlw ÌNwrwk bweU ÌaËK Ggwk AìæZ g^wP×K„ |
আবারও কি নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র
ড. মাহ্বুব উল্লাহ্

বিগত কয়েক সপ্তাহজুড়ে শাসক দলের মন্ত্রীবর্গ এবং তাদের বুদ্ধিশ্রমিকরা যেসব কথাবার্তা বলছেন এবং যেভাবে আচার-আচরণ করছেন তা থেকে এমন আশঙ্কা করা অমূলক হবে না যে, অচিরেই দেশে বেসামরিক স্বৈরাচারের উদ্ভব ঘটতে যাচ্ছে। সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী উদারনৈতিক গণতন্ত্রের ব্যাপারে তার নিজের অনীহার মনোভাব প্রকাশ করেছেন। সরকার সমর্থক রাজনীতিবিদরা বাকশাল ব্যবস্থার গুণকীর্তন করেছেন। এর মধ্যে একজন এমনও বলেছেন, ওই ব্যবস্থা যদি অব্যাহত থাকত তাহলে ১৯৮০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতো। সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর উপর সর্বোচ্চ আদালতের রায় সম্পর্কে সংবাদপত্রে যতটুকু প্রকাশিত হয়েছে তারপরেই আমরা দেখতে পাচ্ছি সকল জড়তা এবং দ্বিধাচিত্ততা ঝেড়ে ফেলে এ ধরনের স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটছে। কিন্তু তারা যে সত্যটি উপলব্ধি করতে চান না কিংবা যে সত্যের মুখোমুখি হতে চান না সেটা হলো বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিত্তি কীভাবে রচিত হয়েছিল। পাকিস্তানি শাসনের ২৪ বছরে অবিভক্ত পাকিস্তানের জনগণকে নিষ্কলুষ গণতন্ত্রের জন্য অবিরাম সংগ্রাম করতে হয়েছে। সামরিক শাসন ও অগণতান্ত্রিকতার জগদ্দল পাথর অপসারণের জন্য তত্কালীন পাকিস্তানের দুই অংশের জনগণকে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম করতে হয়েছিল। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণ করে দিয়েছিল পাকিস্তানি জনগণ গণতন্ত্র ছাড়া অন্য কোনো ব্যবস্থা মেনে নেবে না। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের সবচেয়ে বড় সাফল্যটি ছিল সামরিক স্বৈরশাসক ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের ক্ষমতার রঙ্গমঞ্চ থেকে বিদায় গ্রহণ। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র তরুণরাই সবচেয়ে সাহসীা ভূমিকা পালন করে। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বামপন্থী রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক তারিক আলী তার চধশরংঃধহ : গরষরঃধত্ু ত্ঁষব ড়ত্ ঢ়বড়ঢ়ষব'ং ঢ়ড়বিত্ গ্রন্থে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের সাফল্য সম্পর্কে তার অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে এই অভ্যুত্থানের সঙ্গে ১৯৬৮তে ফ্রান্সের ছাত্র-শ্রমিকদের তুলনা করেছিলেন। ১৯৬৮-এর মে মাসে রুডি ডাটস্কি ও কোন বেন্ডিটের মতো প্রথাবিরোধী ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে ফ্রান্সে যে বৈপ্লবিক টালমাটাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল তাতে মনে হচ্ছিল ফ্রান্স একটি সমাজ বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে উপনীত। কিন্তু সেই বিশাল অভ্যুত্থান কোনো সুনির্দিষ্ট সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। তারা ফরাসি প্রেসিডেন্ট দ্যাগলের রক্ষণশীল সরকারকেও ক্ষমতা থেকে সরাতে সক্ষম হয়নি। তাদের এ ব্যর্থতার একটি বড় কারণ ছিল তত্কালীন ফ্রান্সের সোভিয়েতপন্থী কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ন্ত্রিত শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্বের সমর্থন পায়নি। কিন্তু ১৯৬৯-এ যে ছাত্র গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল সেই অভ্যুত্থানে এশিয়ার দ্যাগল বলে পরিচিতি অর্জনকারী লৌহমানব আইয়ুব খান ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। এই দিক থেকে এশিয়ার এ ছাত্র অভ্যুত্থানটি ইউরোপের একটি দেশের ছাত্র অভ্যুত্থানের তুলনায় ছিল অনেক বেশি সফল; কিন্তু এই অভ্যুত্থানের ব্যর্থতা হলো একটি সামরিক বা আধা-সামরিক সরকারের বিদায় হলেও তার জায়গায় এসেছিল আরেকটি সামরিক সরকার। এই সামরিক সরকারেরই নেতৃত্বে ছিল জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান। অর্থাত্ পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী স্থিতাবস্থাকে ধরে রাখার জন্য তাদের দীর্ঘদিনের প্রতিভূকে পাল্টে নতুন একজন প্রতিভূ খুঁজে নিয়েছিল। এই প্রসঙ্গে আমাদের একথাও স্মরণ করতে হবে যে, ফ্রান্সের ট্রেড ইউনিয়ন সংস্থা মি. জিটির মতো কোনো সংস্থা বা দল খোলাখুলি আইয়ুব খানের পক্ষাবলম্বন করার সাহস পায়নি। অভ্যুত্থানের শক্তি এতই প্রবল ছিল যে, কোনো দল বা গোষ্ঠীর পক্ষে আইয়ুব খানের জন্য ওকালতি করার সাহস হয়নি। আইয়ুব খান রাজনৈতিক নেতাদের গোলটেবিল বৈঠক ডেকে একটি আপসরফা করতে চেয়েছিলেন; কিন্তু তার সেই চেষ্টাও ভণ্ডুল হয়ে যায়।
আইয়ুব খান যখন গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তখন পাকিস্তানের ক্ষমতাকেন্দ্র পাঞ্জাবসহ বিভিন্ন স্থানে আপসহীন লড়াই ও সংগ্রামের জন্য একের পর এক বিশাল জনসমাবেশে আগুনঝরা ভাষায় বক্তৃতা করছিলেন। পশ্চিম পাকিস্তানে রাজনৈতিক সফর শেষে তিনি ২৪ মার্চ ১৯৬৯ ঢাকায় ফিরে আসেন। ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে তাকে বিপ্লবী সংবর্ধনা জানানো হয়। হাজার হাজার ছাত্র-তরুণ এবং তার দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির কর্মী ও সমর্থকরা লাল পতাকা হাতে মিছিল সহকারে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত নিয়ে আসে তাকে। মওলানা ভাসানীকে একটি ট্রাকের উপর বসানো হয়। তার পাশে আরও ছিলেন তত্কালীন ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তোয়াহা, রাশেদ খান মেনন এবং আমি নিজে। মিছিল শেষে মওলানা ভাসানী ইস্কাটনে অবস্থিত ন্যাপের কোষাধ্যক্ষ এবং ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী কর্তৃক গুম করে ফেলা সাইদুল হাসান সাহেবের বাসায় ওঠেন। সেদিনই রাত ৮টার দিকে মওলানা ভাসানী আমাদের বেশ ক’জনের সঙ্গে রাজনৈতিক আলাপে মেতে উঠেছিলেন। সেই বৈঠকে সদ্য কারামুক্ত ফরিদপুরের কমিউনিস্ট নেতা কমরেড সমর সিংও উপস্থিত ছিলেন। মওলানা ভাসানী অনেকটা হাল্কা মেজাজে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘মহবুব দেশে যদি সামরিক শাসন জারি হয় তাহলে কি করবা?’ উল্লেখ্য যে, মওলানা ভাসানী আমাকে স্নেহ করে মাহবুবের পরিবর্তে মহবুব বলেই ডাকতেন। আমার পাল্টা প্রশ্ন ছিল, দেশে কি তাহলে সামরিক শাসন জারি হতে যাচ্ছে? আমার প্রশ্ন শেষ হতে না হতেই কমরেড সমর সিং বলে বসলেন, ‘না হুজুর, এটা অসম্ভব। এত বড় গণঅভ্যুত্থানের মুখে সামরিক শাসন অসম্ভব।’ মওলানা সাহেব কিঞ্চিত্ পরিহাসের সুরে বললেন, ‘তোমরা কমিউনিস্টরা পাকিস্তান রাষ্ট্রটিকে চিনতে পারনি।’ তার এই উক্তির পর আমার সন্দেহের অবকাশ থাকল না যে, সামরিক শাসন অবশ্যম্ভাবী। পরদিনই ইয়াহিয়া খান সমগ্র পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করল। সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। কিন্তু তার পাশাপাশি সমগ্র পাকিস্তানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠারও প্রতিশ্রুতি দেয়া হলো। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে পূর্ববাংলার জাতীয়তাবাদী আকাঙ্ক্ষার বিস্ফোরণের প্রচণ্ডতা ও তার পরিণতি উপলব্ধি করে পূর্ববাংলাবাসীকে আশ্বস্ত করার জন্য এই প্রদেশের জনগণের দীর্ঘদিনের লালিত দাবি জনসংখ্যাভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব মেনে নিল ইয়াহিয়া খান। অতীতে সংখ্যাসাম্যের নীতি অনুসরণ করে পূর্ববাংলার জনসংখ্যা অধিক হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানের জাতীয় সংসদে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনপ্রতিনিধিদের সংখ্যা ছিল সমান সমান। কিন্তু জনসংখ্যাভিত্তিক প্রতিনিধিত্বের দাবি স্বীকৃত হওয়ার ফলে পূর্ববাংলার স্বাধিকার অর্জনের সম্ভাবনা উজ্জ্বলতর হলো। ১৯৭০-এর ডিসেম্বর নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে দুটি আসন বাদে সবক’টি আসন পেল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ পাকিস্তান জাতীয় সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে তা সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান আঁচ করতে পারেননি। ফলেই শুরু হলো নানামুখী চক্রান্ত। সেই কাহিনী সচেতন পাঠকদের অজানা থাকার কথা নয়। সবশেষে পূর্ববাংলাবাসীর ন্যায্য আকাঙ্ক্ষাকে রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দিতে ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ রাতে শুরু হলো পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞ। ৯ মাস সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হলো বাংলাদেশ। একটি পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের জন্য প্রাথমিক শর্ত হিসেবে প্রয়োজন ছিল একটি অবাধ নির্বাচন এবং জনসংখ্যার অনুপাতে জনপ্রতিনিধিত্ব। ’৭০-এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন আওয়ামী লীগের ৬ দফা দাবির নৈতিক সাফল্য নিশ্চিত করে। এই নৈতিক সাফল্যের পটভূমি ব্যতিরেকে মুক্তিযুদ্ধের যথার্থতা বিশ্বজনমতের কাছে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হতো না। সুতরাং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নৈতিক ভিত্তি এবং প্রাণরসের উত্স হলো গণতন্ত্র। আজ সেই গণতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবা হচ্ছে। ফ্যাসিবাদী বাকশালী শাসনের যথার্থতা প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালানো হচ্ছে। যারা এভাবে গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরার কথা বলছেন তাদের এসব বক্তব্যকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে ভাবার সুযোগ নেই। অগণতান্ত্রিকতা ও স্বৈরতন্ত্রের উলঙ্গ অভিব্যক্তি আমরা এখন প্রত্যক্ষ করছি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নির্মম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এ ধরনের হত্যাকাণ্ড কোনো সভ্য মানুষ কখনোই মেনে নিতে পারে না। কিন্তু সেই ঘটনাকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেশব্যাপী চিরুনি অভিযান চালিয়ে হাজার হাজার নিরপরাধ রাজনৈতিক কর্মী ও ছাত্রকে গণগ্রেফতার ও হয়রানি কোন মানদণ্ডে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? অপরদিকে শাসক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা যখন হত্যা ও সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটায় কিংবা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও ভর্তিবাণিজ্যে লিপ্ত হয় তখন তো চিরুনি অভিযান চলতে দেখি না। আসলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো পক্ষের উপরই চিরুনি অভিযানজাতীয় ঢালাও কোনো নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ নেই। দুর্বৃত্ত ও অপরাধীদের দমনের জন্য বিদ্যমান আইনের ছক অনুসারেই এগুতে হবে। আমরা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে জানি, আইনের শাসনের ব্যাপারটি বর্তমান শাসক দলের কাছে খুব পছন্দনীয় কিছু নয়। ১৯৭৫-পূর্ববর্তী সময়ে হুঙ্কার দিয়ে উচ্চারণ করা হয়েছিল আমরা আইনের শাসন নয়, মুজিবের শাসন চাই। ব্যক্তির স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে এ ধরনের হুঙ্কার উচ্চারিত হয়েছিল। অবশ্য এর অল্প ক’মাসের মধ্যেই সংবিধানের খোলনইচে পাল্টে একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল। ভারতেও প্রায় পাশাপাশি সময়ে ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সমগ্র ভারতে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন। দু’বছর স্থায়ী জরুরি অবস্থার সময় গণতন্ত্রের ঐতিহ্যবাহী ভারত একটি বৃহত্ কারাগারে পরিণত হয়েছিল। সেই সময়কার ভারতেও স্লোগান তোলা হয়েছিল 'ওহফরধ রং ওহফরত্ধ ধহফ ওহফরত্ধ রং ওহফরধ'. ১৯৭৫-পূর্ববর্তী সময়ে বাংলাদেশেও শাসক দল এরকমই একটি স্লোগান দিত। স্লোগানটি ছিল ‘এক নেতা এক দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।’ আজ যখন বাংলাদেশে উদারনৈতিক গণতন্ত্রকে অনুপযোগী বলে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা মন্তব্য করেন তখন আতঙ্কিত বোধ না করে পারি না। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও জেনারেল মইন বাংলাদেশের জন্য ভিন্ন মডেলের গণতন্ত্র প্রয়োজন বলে একটি তত্ত্ব খাড়া করতে চেয়েছিল। জেনারেল মইনের এই তত্ত্বের সঙ্গে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান অনুসৃত তত্ত্বের একটি মিল লক্ষ্য করা যায়। আইয়ুব খান বলতেন, চধশরংঃধহ হববফং ধ ংুংঃবস ড়ভ ফবসড়পত্ধপু ংঁরঃবফ ঃড় ঃযব মবহরঁং ড়ভ রঃং ঢ়বড়ঢ়ষব. আইয়ুব খান মনে করতেন পাকিস্তানের নিরক্ষর ও বুদ্ধিশুদ্ধিহীন জনগণের জন্য মৌলিক গণতন্ত্রের মতো এক অদ্ভুত কিসিমের গণতন্ত্র দরকার। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটাধিকার হরণ করে আইয়ুব খান মৌলিক গণতন্ত্র চালু করেছিলেন এবং দীর্ঘদিন ক্ষমতায়ও টিকে ছিলেন। জেনারেল মইনও সম্ভবত তার আজব কল্পনার ফানুস হিসেবে বাংলাদেশের উপযোগী গণতন্ত্র চালু করতে চেয়েছিলেন। এখন দেখছি যারা দাবি করেছিলেন মইন সাহেবদের শাসন তাদের আন্দোলনের ফসল তাদেরই মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আকারে-ইঙ্গিতে এমনকি খোলামেলাভাবে অতীতের স্বৈরশাসকদের মতো হয়তোবা কেবল গণতান্ত্রিকতার একটি লেবাস রেখে নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র বা অনুদার গণতন্ত্র চালু করার কথা ভাবছেন। এই অবিমৃষ্যকারিতার পরিণতি কী তারা আদৌ ভেবে দেখেছেন? আশা করব তারা হুঁশ-জ্ঞান হারাবেন না।
লেখক : অধ্যাপক, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আইয়ুব খান যখন গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তখন পাকিস্তানের ক্ষমতাকেন্দ্র পাঞ্জাবসহ বিভিন্ন স্থানে আপসহীন লড়াই ও সংগ্রামের জন্য একের পর এক বিশাল জনসমাবেশে আগুনঝরা ভাষায় বক্তৃতা করছিলেন। পশ্চিম পাকিস্তানে রাজনৈতিক সফর শেষে তিনি ২৪ মার্চ ১৯৬৯ ঢাকায় ফিরে আসেন। ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে তাকে বিপ্লবী সংবর্ধনা জানানো হয়। হাজার হাজার ছাত্র-তরুণ এবং তার দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির কর্মী ও সমর্থকরা লাল পতাকা হাতে মিছিল সহকারে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত নিয়ে আসে তাকে। মওলানা ভাসানীকে একটি ট্রাকের উপর বসানো হয়। তার পাশে আরও ছিলেন তত্কালীন ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তোয়াহা, রাশেদ খান মেনন এবং আমি নিজে। মিছিল শেষে মওলানা ভাসানী ইস্কাটনে অবস্থিত ন্যাপের কোষাধ্যক্ষ এবং ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী কর্তৃক গুম করে ফেলা সাইদুল হাসান সাহেবের বাসায় ওঠেন। সেদিনই রাত ৮টার দিকে মওলানা ভাসানী আমাদের বেশ ক’জনের সঙ্গে রাজনৈতিক আলাপে মেতে উঠেছিলেন। সেই বৈঠকে সদ্য কারামুক্ত ফরিদপুরের কমিউনিস্ট নেতা কমরেড সমর সিংও উপস্থিত ছিলেন। মওলানা ভাসানী অনেকটা হাল্কা মেজাজে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘মহবুব দেশে যদি সামরিক শাসন জারি হয় তাহলে কি করবা?’ উল্লেখ্য যে, মওলানা ভাসানী আমাকে স্নেহ করে মাহবুবের পরিবর্তে মহবুব বলেই ডাকতেন। আমার পাল্টা প্রশ্ন ছিল, দেশে কি তাহলে সামরিক শাসন জারি হতে যাচ্ছে? আমার প্রশ্ন শেষ হতে না হতেই কমরেড সমর সিং বলে বসলেন, ‘না হুজুর, এটা অসম্ভব। এত বড় গণঅভ্যুত্থানের মুখে সামরিক শাসন অসম্ভব।’ মওলানা সাহেব কিঞ্চিত্ পরিহাসের সুরে বললেন, ‘তোমরা কমিউনিস্টরা পাকিস্তান রাষ্ট্রটিকে চিনতে পারনি।’ তার এই উক্তির পর আমার সন্দেহের অবকাশ থাকল না যে, সামরিক শাসন অবশ্যম্ভাবী। পরদিনই ইয়াহিয়া খান সমগ্র পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করল। সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। কিন্তু তার পাশাপাশি সমগ্র পাকিস্তানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠারও প্রতিশ্রুতি দেয়া হলো। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে পূর্ববাংলার জাতীয়তাবাদী আকাঙ্ক্ষার বিস্ফোরণের প্রচণ্ডতা ও তার পরিণতি উপলব্ধি করে পূর্ববাংলাবাসীকে আশ্বস্ত করার জন্য এই প্রদেশের জনগণের দীর্ঘদিনের লালিত দাবি জনসংখ্যাভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব মেনে নিল ইয়াহিয়া খান। অতীতে সংখ্যাসাম্যের নীতি অনুসরণ করে পূর্ববাংলার জনসংখ্যা অধিক হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানের জাতীয় সংসদে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনপ্রতিনিধিদের সংখ্যা ছিল সমান সমান। কিন্তু জনসংখ্যাভিত্তিক প্রতিনিধিত্বের দাবি স্বীকৃত হওয়ার ফলে পূর্ববাংলার স্বাধিকার অর্জনের সম্ভাবনা উজ্জ্বলতর হলো। ১৯৭০-এর ডিসেম্বর নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে দুটি আসন বাদে সবক’টি আসন পেল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ পাকিস্তান জাতীয় সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে তা সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান আঁচ করতে পারেননি। ফলেই শুরু হলো নানামুখী চক্রান্ত। সেই কাহিনী সচেতন পাঠকদের অজানা থাকার কথা নয়। সবশেষে পূর্ববাংলাবাসীর ন্যায্য আকাঙ্ক্ষাকে রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দিতে ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ রাতে শুরু হলো পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞ। ৯ মাস সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হলো বাংলাদেশ। একটি পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের জন্য প্রাথমিক শর্ত হিসেবে প্রয়োজন ছিল একটি অবাধ নির্বাচন এবং জনসংখ্যার অনুপাতে জনপ্রতিনিধিত্ব। ’৭০-এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন আওয়ামী লীগের ৬ দফা দাবির নৈতিক সাফল্য নিশ্চিত করে। এই নৈতিক সাফল্যের পটভূমি ব্যতিরেকে মুক্তিযুদ্ধের যথার্থতা বিশ্বজনমতের কাছে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হতো না। সুতরাং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নৈতিক ভিত্তি এবং প্রাণরসের উত্স হলো গণতন্ত্র। আজ সেই গণতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবা হচ্ছে। ফ্যাসিবাদী বাকশালী শাসনের যথার্থতা প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালানো হচ্ছে। যারা এভাবে গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরার কথা বলছেন তাদের এসব বক্তব্যকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে ভাবার সুযোগ নেই। অগণতান্ত্রিকতা ও স্বৈরতন্ত্রের উলঙ্গ অভিব্যক্তি আমরা এখন প্রত্যক্ষ করছি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নির্মম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এ ধরনের হত্যাকাণ্ড কোনো সভ্য মানুষ কখনোই মেনে নিতে পারে না। কিন্তু সেই ঘটনাকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেশব্যাপী চিরুনি অভিযান চালিয়ে হাজার হাজার নিরপরাধ রাজনৈতিক কর্মী ও ছাত্রকে গণগ্রেফতার ও হয়রানি কোন মানদণ্ডে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? অপরদিকে শাসক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা যখন হত্যা ও সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটায় কিংবা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও ভর্তিবাণিজ্যে লিপ্ত হয় তখন তো চিরুনি অভিযান চলতে দেখি না। আসলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো পক্ষের উপরই চিরুনি অভিযানজাতীয় ঢালাও কোনো নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ নেই। দুর্বৃত্ত ও অপরাধীদের দমনের জন্য বিদ্যমান আইনের ছক অনুসারেই এগুতে হবে। আমরা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে জানি, আইনের শাসনের ব্যাপারটি বর্তমান শাসক দলের কাছে খুব পছন্দনীয় কিছু নয়। ১৯৭৫-পূর্ববর্তী সময়ে হুঙ্কার দিয়ে উচ্চারণ করা হয়েছিল আমরা আইনের শাসন নয়, মুজিবের শাসন চাই। ব্যক্তির স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে এ ধরনের হুঙ্কার উচ্চারিত হয়েছিল। অবশ্য এর অল্প ক’মাসের মধ্যেই সংবিধানের খোলনইচে পাল্টে একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল। ভারতেও প্রায় পাশাপাশি সময়ে ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সমগ্র ভারতে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন। দু’বছর স্থায়ী জরুরি অবস্থার সময় গণতন্ত্রের ঐতিহ্যবাহী ভারত একটি বৃহত্ কারাগারে পরিণত হয়েছিল। সেই সময়কার ভারতেও স্লোগান তোলা হয়েছিল 'ওহফরধ রং ওহফরত্ধ ধহফ ওহফরত্ধ রং ওহফরধ'. ১৯৭৫-পূর্ববর্তী সময়ে বাংলাদেশেও শাসক দল এরকমই একটি স্লোগান দিত। স্লোগানটি ছিল ‘এক নেতা এক দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।’ আজ যখন বাংলাদেশে উদারনৈতিক গণতন্ত্রকে অনুপযোগী বলে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা মন্তব্য করেন তখন আতঙ্কিত বোধ না করে পারি না। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও জেনারেল মইন বাংলাদেশের জন্য ভিন্ন মডেলের গণতন্ত্র প্রয়োজন বলে একটি তত্ত্ব খাড়া করতে চেয়েছিল। জেনারেল মইনের এই তত্ত্বের সঙ্গে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান অনুসৃত তত্ত্বের একটি মিল লক্ষ্য করা যায়। আইয়ুব খান বলতেন, চধশরংঃধহ হববফং ধ ংুংঃবস ড়ভ ফবসড়পত্ধপু ংঁরঃবফ ঃড় ঃযব মবহরঁং ড়ভ রঃং ঢ়বড়ঢ়ষব. আইয়ুব খান মনে করতেন পাকিস্তানের নিরক্ষর ও বুদ্ধিশুদ্ধিহীন জনগণের জন্য মৌলিক গণতন্ত্রের মতো এক অদ্ভুত কিসিমের গণতন্ত্র দরকার। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটাধিকার হরণ করে আইয়ুব খান মৌলিক গণতন্ত্র চালু করেছিলেন এবং দীর্ঘদিন ক্ষমতায়ও টিকে ছিলেন। জেনারেল মইনও সম্ভবত তার আজব কল্পনার ফানুস হিসেবে বাংলাদেশের উপযোগী গণতন্ত্র চালু করতে চেয়েছিলেন। এখন দেখছি যারা দাবি করেছিলেন মইন সাহেবদের শাসন তাদের আন্দোলনের ফসল তাদেরই মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আকারে-ইঙ্গিতে এমনকি খোলামেলাভাবে অতীতের স্বৈরশাসকদের মতো হয়তোবা কেবল গণতান্ত্রিকতার একটি লেবাস রেখে নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র বা অনুদার গণতন্ত্র চালু করার কথা ভাবছেন। এই অবিমৃষ্যকারিতার পরিণতি কী তারা আদৌ ভেবে দেখেছেন? আশা করব তারা হুঁশ-জ্ঞান হারাবেন না।
লেখক : অধ্যাপক, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শুরু হচ্ছে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ : জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ চাই
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ভারত বরাক নদীর টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ শুরু করতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, বাংলাদেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করবে না ভারত। টিপাইমুখে একতরফা বাঁধ নির্মাণের আশঙ্কাকে বিরোধীদলের ভারতবিরোধী প্রচারণা আখ্যা দিয়ে আপাতত এমন কোনো পরিকল্পনা না থাকার বিষয়টি ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলেছিলেন মন্ত্রী ও সরকারি দলের নেতারা। বিষয়টি চাপা দেয়ার অপচেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল তখনই। ভারতের প্রস্তুতি যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সে ভূমিকাই নিয়েছে সরকার। এর সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে গতকাল আমার দেশ-এ প্রকাশিত টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ শুরুর খবর থেকে।
মনিপুরের হুইয়েন নিউজ সার্ভিসের খবরে বলা হয়েছে, ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুত্ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংস্থা ন্যাশনাল হাইড্রো পাওয়ার কো-অপারেশন লিঃ (এনএইচপিসি) ও সাতলুজ জলবিদ্যুত্ নির্গম লিঃ (এসজেভিএন) এবং মনিপুর সরকারের সঙ্গে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণে সমঝোতা স্বাক্ষর বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা করেছে। মনিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে অনুষ্ঠিত ওই আলোচনায় ৮ হাজার ১৮৯ কোটি রুপি ব্যয়ে নির্মিতব্য প্রকল্পটির খুঁটিনাটি বিষয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে সেখানে প্রকল্প এলাকার নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে। আলোচনার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এজন্য ৩০০ কোটি রুপি বরাদ্দ করে বলে জানা গেছে।
সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর উত্স বরাক নদীর টিপাইমুখের অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৭৮ মিটার উঁচুতে। ভূমিকম্পপ্রবণ এই স্থানে ৩৯০ মিটার লম্বা এবং ১৬২.৮ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট বাঁধ নির্মিত হলে পার্শ্ববর্তী ২৭৫.৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকা পানিতে ডুবে যাবে। ফলে বাঁধটি ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে। একই সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘর, ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থাপনাসমূহ, ফসলি জমি ও বনভূমি, সব থেকেই উচ্ছেদ হতে হবে। ফলে বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে মনিপুর ও ভারত জুড়ে প্রবল জনমত এবং নাশকতার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া কারও পক্ষেই সম্ভব হয়নি। আদিবাসী জনগণ ও ওয়ার্ল্ড কমিশন অন ড্যামসের সুপারিশ উপেক্ষা করার অভিযোগ তোলা হয়েছে সেখানকার মানবাধিকার সংগঠনসমূহের পক্ষ থেকে। ভারতীয় জনগণের বিরোধিতা মোকাবিলার জন্য শুরু থেকেই আটঘাট বেঁধে নামার জন্যই কেন্দ্রীয় সরকার বিশাল অংকের অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে, সন্দেহ নেই।
কিন্তু টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণে ভাটির দেশ বাংলাদেশের যে ক্ষতি তার বিরোধিতা করবে কে? অভিন্ন নদী বরাকের ওপর বাঁধ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের সম্মতি নিতে বাধ্য ভারত সরকার। এমন আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি লঙ্ঘন করে একতরফা এই বাঁধ নির্মিত হলে সিলেট বিভাগসহ দেশের পূর্ব-দক্ষিণাঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও আর্থসামাজিক বিপর্যয় ভয়াবহ হয়ে উঠবে। সেখানে ফারাক্কার পরিণতি এড়াতেই টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের জনগণের প্রতিবাদ ও বিরোধীদলের আপত্তির মুখে মহাজোট সরকার যে আলো-আঁধারির আশ্রয় নিয়েছে সেটা পরিষ্কার। বিগত আমলে যেভাবে গঙ্গার পানি চুক্তি করে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয়া হয়েছিল, টিপাইমুখ নিয়ে আওয়ামী মহাজোট সরকারের ভূমিকাও স্পষ্ট নয়। বিষয়টি নিয়ে সরকারের সুস্পষ্ট ভূমিকা এবং জাতীয় সংসদে খোলামেলা আলোচনার দাবি খুবই যুক্তিসঙ্গত।
ভারত একের পর এক দু’দেশের অভিন্ন ৫৪ নদীর ৪২টিতেই বাঁধ ও ব্যারাজ নির্মাণ করেছে। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ভোগ করতে হচ্ছে এদেশবাসীকে। অতএব নিজ থেকে সরকার আগ্রহী না হলে কালবিলম্ব না করে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের বিরোধিতায় প্রবল জনমত গড়ে তোলা এবং বিষয়টি নিয়ে দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করতে সরকারকে বাধ্য করা দরকার। সরকার যদি এক্ষেত্রে গড়িমসি করে তবে দেশপ্রেমিক জনগণকেই ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
মনিপুরের হুইয়েন নিউজ সার্ভিসের খবরে বলা হয়েছে, ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুত্ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংস্থা ন্যাশনাল হাইড্রো পাওয়ার কো-অপারেশন লিঃ (এনএইচপিসি) ও সাতলুজ জলবিদ্যুত্ নির্গম লিঃ (এসজেভিএন) এবং মনিপুর সরকারের সঙ্গে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণে সমঝোতা স্বাক্ষর বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা করেছে। মনিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে অনুষ্ঠিত ওই আলোচনায় ৮ হাজার ১৮৯ কোটি রুপি ব্যয়ে নির্মিতব্য প্রকল্পটির খুঁটিনাটি বিষয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে সেখানে প্রকল্প এলাকার নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে। আলোচনার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এজন্য ৩০০ কোটি রুপি বরাদ্দ করে বলে জানা গেছে।
সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর উত্স বরাক নদীর টিপাইমুখের অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৭৮ মিটার উঁচুতে। ভূমিকম্পপ্রবণ এই স্থানে ৩৯০ মিটার লম্বা এবং ১৬২.৮ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট বাঁধ নির্মিত হলে পার্শ্ববর্তী ২৭৫.৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকা পানিতে ডুবে যাবে। ফলে বাঁধটি ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে। একই সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘর, ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থাপনাসমূহ, ফসলি জমি ও বনভূমি, সব থেকেই উচ্ছেদ হতে হবে। ফলে বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে মনিপুর ও ভারত জুড়ে প্রবল জনমত এবং নাশকতার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া কারও পক্ষেই সম্ভব হয়নি। আদিবাসী জনগণ ও ওয়ার্ল্ড কমিশন অন ড্যামসের সুপারিশ উপেক্ষা করার অভিযোগ তোলা হয়েছে সেখানকার মানবাধিকার সংগঠনসমূহের পক্ষ থেকে। ভারতীয় জনগণের বিরোধিতা মোকাবিলার জন্য শুরু থেকেই আটঘাট বেঁধে নামার জন্যই কেন্দ্রীয় সরকার বিশাল অংকের অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে, সন্দেহ নেই।
কিন্তু টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণে ভাটির দেশ বাংলাদেশের যে ক্ষতি তার বিরোধিতা করবে কে? অভিন্ন নদী বরাকের ওপর বাঁধ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের সম্মতি নিতে বাধ্য ভারত সরকার। এমন আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি লঙ্ঘন করে একতরফা এই বাঁধ নির্মিত হলে সিলেট বিভাগসহ দেশের পূর্ব-দক্ষিণাঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও আর্থসামাজিক বিপর্যয় ভয়াবহ হয়ে উঠবে। সেখানে ফারাক্কার পরিণতি এড়াতেই টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের জনগণের প্রতিবাদ ও বিরোধীদলের আপত্তির মুখে মহাজোট সরকার যে আলো-আঁধারির আশ্রয় নিয়েছে সেটা পরিষ্কার। বিগত আমলে যেভাবে গঙ্গার পানি চুক্তি করে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয়া হয়েছিল, টিপাইমুখ নিয়ে আওয়ামী মহাজোট সরকারের ভূমিকাও স্পষ্ট নয়। বিষয়টি নিয়ে সরকারের সুস্পষ্ট ভূমিকা এবং জাতীয় সংসদে খোলামেলা আলোচনার দাবি খুবই যুক্তিসঙ্গত।
ভারত একের পর এক দু’দেশের অভিন্ন ৫৪ নদীর ৪২টিতেই বাঁধ ও ব্যারাজ নির্মাণ করেছে। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ভোগ করতে হচ্ছে এদেশবাসীকে। অতএব নিজ থেকে সরকার আগ্রহী না হলে কালবিলম্ব না করে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের বিরোধিতায় প্রবল জনমত গড়ে তোলা এবং বিষয়টি নিয়ে দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করতে সরকারকে বাধ্য করা দরকার। সরকার যদি এক্ষেত্রে গড়িমসি করে তবে দেশপ্রেমিক জনগণকেই ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
চিরুনি অভিযান : বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা এবং
মাফলার পরা সাত-আটজন
মাফলার পরা সাত-আটজন
শা হ আ হ ম দ রে জা

আওয়ামী লীগ সরকার হঠাত্ ইসলামী ছাত্রশিবির ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ায় সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ও সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীনরা শুধু বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের লাশ ও কবর নিয়ে কুরুচিপূর্ণ ভাষণ-বিবৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছেন না, তারা লগি-বৈঠার তাণ্ডবের কথাও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী সুদূর কুয়েত থেকে হুকুম পাঠানোর পরমুহূর্তে দৃশ্যপটে এসেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবার মন্ত্রী সাহারা খাতুনকে টেক্কা দিয়েছেন, হেলিকপ্টারে উড়ে চলে গেছেন রাজশাহীতে। ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেনের হত্যাসহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কিত তদন্ত রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করারও প্রয়োজন বোধ করেননি শামসুল হক টুকু। তিনি সরাসরি ইসলামী ছাত্রশিবিরের দিকে আঙুল তুলেছেন এবং শিবিরকে ‘নির্মূল ও উত্খাত’ করার নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, দেশের যেখানে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিবিরের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে সেখানেই শিবিরকে ‘নির্মূল ও উত্খাত’ করার হুকুম দিয়েছেন তিনি। তার হুকুমে শুরু হয়েছে ‘চিরুনি অভিযান’! গ্রেফতার করা হচ্ছে শয়ের হিসেবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও কলেজের হোস্টেল থেকে তো বটেই, রাজধানীসহ বিভিন্ন শহর ও নগরীর মেস ও বাসাবাড়ি এবং গ্রামের বাড়িতে পর্যন্ত হামলা চালানো হচ্ছে। বাদ পড়ছেন না জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরাও। হত্যারও শিকার হচ্ছেন শিবির কর্মীরা। এরই মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে একজন এবং চট্টগ্রামে একজন শিবির কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। অথচ ছাত্রশিবির কোনো নিষিদ্ধ সংগঠন নয়। আইনসম্মতভাবে তত্পর এ ছাত্র সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাও হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশে, ১৯৭৭ সালে।
শিবিরের বিরুদ্ধে এই মারমুখী কর্মকাণ্ড শুধু নয়, ছাত্রলীগের প্রতি সরকারের মনোভাবও মানুষকে স্তম্ভিত করেছে। কারণ, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে দৈনিক প্রথম আলোর ভাষায় ‘প্রতিপক্ষহীন’ ছাত্রলীগ সারাদেশে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি আর সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল (৮ ফেব্রুয়ারির সম্পাদকীয়)। ভর্তি বাণিজ্যেও ছাত্রলীগ রেকর্ডের পর রেকর্ড সৃষ্টি করেছে, নষ্ট করেছে শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের জের ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়া সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশের ছোড়া টিয়ার গ্যাসের শেলের আঘাতে ২ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু ঘটে মেধাবী ছাত্র আবু বকর সিদ্দিকের। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এতটাই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল যে, সরকার সমর্থক দৈনিকগুলোও ‘ছাত্রলীগকে সামলান’ শিরোনামে প্রধানমন্ত্রীকে তাগিদ না দিয়ে পারেনি। টেলিভিশনের টকশোতেও ছাত্রলীগের অপকর্মই প্রধান আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু সরকারের এতদিন টনক নড়েনি। এমনকি ছাত্রদল কর্মীর মৃত্যুর পরও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন নিষ্ঠুর মানসিকতার পরিচয় দিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, এটা একটা ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’, ‘এমনটা ঘটতেই পারে’ এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিকই’ রয়েছে! সে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই আবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মীর মৃত্যুতে একেবারে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেছেন। অর্থাত্ অন্য কোনো সংগঠনের কর্মী বা সাধারণ মানুষের মৃত্যুতে ক্ষমতাসীনদের কিছু যায়-আসে না। তাদের মাথা খারাপ হয়ে যায় শুধু ছাত্রলীগের কেউ মারা গেলে। এ যে শুধু কথার কথা নয়, বাস্তবেও তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারুক হত্যাকে কারণ হিসেবে সামনে আনা হলেও সরকারের হঠাত্ এতটা নিষ্ঠুরভাবে তেড়ে ওঠার পেছনে অন্য একটি কারণ রয়েছে। সেটি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফর। এই সফরের সময় ভারতকে অনেক কিছুই দিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের স্বার্থে এটা-ওটা অর্জনের বাগাড়ম্বর শোনা গেলেও বাস্তবে তেমন চেষ্টাই করেননি প্রধানমন্ত্রী। তার ব্যস্ততা ছিল শুধু ভারতকে দিয়ে আসার জন্য। দিয়েও এসেছেন তিনি ভারতের ইচ্ছা ও নির্দেশ অনুসারে। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের শুধু নয়, ভারতকে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রেল ও সড়কপথে পণ্য পরিবহনের সুযোগ-সুবিধাও দিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী। ভারত এখন থেকে আশুগঞ্জ নৌবন্দর ব্যবহার করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য আনা-নেয়া করতে পারবে। এখন কলকাতা ও আগরতলার দূরত্ব ১৫০০ কিলোমিটারের স্থলে কমে হবে ৩৫০ কিলোমিটার। বড় কথা, এর ফলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে মারাত্মকভাবে। মাত্র ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ আমদানির আড়ালে প্রধানমন্ত্রী ভারতকে বাংলাদেশের জাতীয় বিদ্যুত্ গ্রিডের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠারও সুযোগ দিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশের জাতীয় বিদ্যুত্ গ্রিড ব্যবহার করে ভারত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো থেকে পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে বিদ্যুত্ নিয়ে যাবে—যা এতদিন সম্ভব হচ্ছিল না। অন্যদিকে বিদ্যুতের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ভারতের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে। ভারত চাইলে যে কোনো সময় বাংলাদেশে বিদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধ করতে পারবে, বাংলাদেশের করার কিছুই থাকবে না। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের মতো অন্য কোনো বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বার্থে ভূমিকা রাখেননি। শেখ হাসিনা উল্টো এমন এক ‘সীমান্ত হাট’ চালু করতে সম্মতি দিয়ে এসেছেন, যে হাট শুরু হলে ভারতীয় পণ্যের দাপটে বাংলাদেশী পণ্য বাজার হারাবে, বাংলাদেশের শিল্প-কারখানার বিনাশ ঘটবে এবং বাংলাদেশকে সম্পূর্ণরূপে ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে হবে। ভারতীয় পণ্যও কয়েক গুণ বেশি দাম দিয়েই কিনতে হবে।
অর্থাত্ প্রধানমন্ত্রী ভারতকে সব বিষয়ে শুধু দিয়েই আসেননি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং শিল্প-বাণিজ্যসহ অর্থনীতির জন্যও হুমকির সৃষ্টি করে এসেছেন। একই কারণে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে, সম্পাদিত সব চুক্তি ও যুক্ত ঘোষণাকে তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। দলগুলো একই সঙ্গে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতেও শুরু করেছিল। ঠিক তখনই সরকার নিয়েছে আগে আক্রমণের কৌশল। ধারণা করা হচ্ছে, নির্দেশনা এসেছে ভারতের উচ্চ পর্যায় থেকে। একটি উদাহরণ হিসেবে ভারতের অন্যতম থিঙ্কট্যাঙ্ক বি. রমনের কিছু কথার উল্লেখ করা যায়। সাবেক এই আমলা ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর একজন শীর্ষ উপদেষ্টা হিসেবেও পরিচিত। ‘চিরুনি অভিযান’ শুরু হওয়ার মাত্র তিন দিন আগে, ৬ ফেব্রুয়ারি ব্যাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারের ভাষণে বি. রমন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে আওয়ামী লীগ সরকার এবং বাংলাদেশে ভারতের স্বার্থবিরোধী প্রধান শক্তি হিসেবে তুলে ধরেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে সম্পাদিত বিভিন্ন চুক্তির ওপর আলোচনা করতে গিয়ে বি. রমন বলেছেন, চুক্তিগুলো বাস্তবায়নের পথে বিএনপি ও জামায়াত প্রতিবন্ধক হয়ে উঠতে পারে। বি. রমনের মতে, নির্বাচনে ভোটারদের আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়লেও দল দুটির রাজপথে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির ক্ষমতা কমে যায়নি। সুতরাং ভারতের স্বার্থে প্রথমে এমন ব্যবস্থা নেয়া দরকার যাতে বিএনপি ও জামায়াতের আন্দোলনের শক্তি অবশিষ্ট না থাকে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আওয়ামী লীগ সরকারও বি. রমনদের প্রেসক্রিপশন অনুসারেই তত্পর হয়ে উঠেছে। এজন্যই সরাসরি প্রতিপক্ষ না হওয়া সত্ত্বেও শিবিরকে টার্গেট করেছে সরকার। এর পেছনে প্রধান উদ্দেশ্য যে জামায়াত ও বিএনপিসহ দেশপ্রেমিক দলগুলোকে ‘শায়েস্তা’ করা এবং তাদের আন্দোলনের ক্ষমতা ধ্বংস করে দেয়া—সে কথাও গোপন রাখা হচ্ছে না। বোঝাই যাচ্ছে, ভারতকে সবকিছু বাধাহীনভাবে দেয়ার উদ্দেশ্যে সরকার এরপর পর্যায়ক্রমে বিএনপি ও ছাত্রদলকেও দেখে নেবে। ভারতকে দিয়ে আসার বিষয়টি যাতে জনগণের চোখে না পড়ে সেটাই চাচ্ছে সরকার।
ঘটনাপ্রবাহে অন্য কিছু আশঙ্কাজনক তথ্যও প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। এরকম একটি তথ্য হলো, বিদেশি কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা নাকি শিবিরসহ দেশপ্রেমিকদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে অংশ নিচ্ছে। তথ্যটিতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ হলো, ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তার মহাজোটের যে শোচনীয় ভরাডুবি ঘটবে সেকথা বিদেশি কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থাই আগে জানতে পেরেছিল। অভিযোগ রয়েছে, এসব সংস্থার পরামর্শেই শুরু হয়েছিল লগি-বৈঠার ভয়ঙ্কর তাণ্ডব। সে তাণ্ডবে, বিশেষ করে পল্টনের হত্যাকাণ্ডের পেছনে তাদের মদত ছিলো বলে মনে করেন অনেকে। সে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোই এবার আওয়ামী লীগের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ভীতি ও উদ্বেগের কারণ হলো, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ শুধু নয়, ইসরাইলের ‘মোসাদ’ও বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে তত্পরতা চালাচ্ছে।
এখানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাকেন্দ্রিক কিছু তথ্যেরও উল্লেখ করা দরকার। প্রকাশিত খবরে জানা গেছে (নয়া দিগন্ত, ১৬ ফেব্রুয়ারি), শাহ মখদুম হলের প্রভোস্ট ড. দুলাল চন্দ্র রায় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার রাতে সাড়ে ১২টার দিকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগের একটি গ্রুপকে টিভি রুমে অবস্থান করার অনুমতি দিয়ে যান। প্রশ্ন উঠেছে, নিয়ম যেখানে ১২টার সময় টিভি রুম বন্ধ করা সেখানে প্রভোস্ট কেন সাড়ে ১২টার পরও ছাত্রলীগের ওই গ্রুপকে টিভি রুমে অবস্থান করার অনুমতি দিয়েছিলেন? শুধু তা-ই নয়, পুলিশকেও তিনি ছাত্রলীগের গ্রুপটিকে ‘দেখভাল’ করার অনুরোধ করেছিলেন।
দ্বিতীয় তথ্যটি হলো, প্রভোস্ট বেরিয়ে যাওয়ার পরপর মাথায় মাফলার পরা সাত-আটজনের একটি গ্রুপ হঠাত্ শাহ মখদুম হলের গেটে এসে হাজির হয়েছিল। গেটের নিয়ন্ত্রণও তারাই নিয়েছিল। তাদের ভয়ে দুই নিরাপত্তা কর্মী পালিয়ে গিয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছে—মাফলার পরা এই সাত-আটজন আসলে কারা? প্রশ্নের কারণ, নিরাপত্তা কর্মীরাও এর আগে কখনও তাদের দেখেনি। জানা গেছে, এ গ্রুপটি হল গেটের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার কিছুক্ষণ পরই টিভি রুম থেকে হঠাত্ ‘মাগো’, ‘বাবারে’ এবং ‘বাঁচাও’ ধরনের চিত্কার শোনা গেছে। পরে শোনানো হয়েছে ফারুকের মৃত্যুর খবর। সংশয়ের কারণ হলো, সিট দখল নিয়ে গোলমাল হয়েছিল বঙ্গবন্ধু হলে। ফারুক তাহলে কেন শাহ মখদুম হলে গিয়ে নিহত হয়েছে? ফারুকই কি তাহলে ‘মাগো’, ‘বাবারে’ এবং ‘বাঁচাও’ বলে চিত্কার করে উঠেছিল?
তৃতীয় তথ্য হিসেবে এসেছে ম্যানহোলে লাশ পাওয়ার রহস্য। কারণ, নবাব আবদুল লতিফ হল, সৈয়দ আমীর আলী হল এবং শাহ মখদুম হলের অবস্থান মুখোমুখি। রাত সাড়ে ৩টায়ও সেখানে ছাত্রলীগ কর্মীদের পুলিশের গাড়িতে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। পুলিশের পাশাপাশি তত্পর দেখা গেছে মাফলার পরা ওই সাত-আটজনকেও। এমন এক অবস্থায় ধাওয়ার মুখে পালাতে ব্যস্ত শিবিরের কারও পক্ষে লাশ টেনে নিয়ে যেতে পারার প্রশ্ন উঠতে পারে না। তাছাড়া অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সৈয়দ আমীর আলী হলের পেছনে যে সেপটিক ট্যাংকের মধ্যে ফারুকের লাশটি ঢোকানো হয়েছিল সেখানে একটিমাত্র ঢাকনাই খোলা ছিল। আগে থেকে ঠিক করা না থাকলে কারও পক্ষে জানা সম্ভব নয় যে, ওই বিশেষ ম্যানহোলের ঢাকনাই খোলা রয়েছে। অর্থাত্ সবই করা হয়েছে পূর্বপরিকল্পনার ভিত্তিতে। ঘটনাপ্রবাহে বিশেষ করে এসেছে মাফলার পরা সাত-আটজনের প্রসঙ্গ। পর্যবেক্ষকরা এর সঙ্গে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তত্পরতা সংক্রান্ত তথ্যও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তাদের অনুমান, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার তাণ্ডবে যেমন বিদেশি কমান্ডোদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে অভিযোগ রয়েছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারুক হত্যকাণ্ডেও তেমনি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্টতা থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। পর্যবেক্ষকরা উপরের তথ্যগুলোকে মিলিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন।
‘চিরুনি অভিযান’কেন্দ্রিক পরিস্থিতি যে এরই মধ্যে আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে সে কথা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না। ধারণা করা হচ্ছে, ভারতের সঙ্গে এবং সর্বতোভাবে ভারতের স্বার্থে সম্পাদিত বিভিন্ন চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়নকে বাধাহীন করার জন্য বিরোধী দলের ওপর দমন অভিযান চালানো আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য আসলে অবশ্যপালনীয় কর্তব্য হয়ে পড়েছে। সরকারকে ভারত সে সিগন্যালই দিয়েছে। বি. রমনের মতো ভারতের নীতিনির্ধারকরাও কথাটা খোলামেলাভাবে বলেছেন। তারা একই সঙ্গে বাংলাদেশে চুক্তির বিরোধিতাকারীদেরও চিহ্নিত করে দেখিয়ে দিয়েছেন। চুক্তিগুলো যাতে বিরোধিতার মুখে না পড়ে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা যায় সে জন্যই কি ভারতের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারও ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছে? পর্যবেক্ষকরা অবশ্য ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, সংবিধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করে ফ্যাসিবাদী পন্থায় হামলা-নির্যাতন চালানোর পরিণতি কোনো যুগে কোনো দেশে কোনো সরকারের জন্যই সুফল বয়ে আনেনি। ভিন্ন মতালম্বীর সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার পদদলিত করে দেশপ্রেমিক দল ও সংগঠনের বিরুদ্ধে যে নিষ্ঠুর অভিযান চালানো হচ্ছে, তার পরিণতিও এক সময় ধ্বংসাত্মকই হয়ে উঠতে পারে।
লেখক : সাংবাদিক
ই-মেইল : shahahmadreza@yahoo.com
শিবিরের বিরুদ্ধে এই মারমুখী কর্মকাণ্ড শুধু নয়, ছাত্রলীগের প্রতি সরকারের মনোভাবও মানুষকে স্তম্ভিত করেছে। কারণ, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে দৈনিক প্রথম আলোর ভাষায় ‘প্রতিপক্ষহীন’ ছাত্রলীগ সারাদেশে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি আর সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল (৮ ফেব্রুয়ারির সম্পাদকীয়)। ভর্তি বাণিজ্যেও ছাত্রলীগ রেকর্ডের পর রেকর্ড সৃষ্টি করেছে, নষ্ট করেছে শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের জের ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়া সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশের ছোড়া টিয়ার গ্যাসের শেলের আঘাতে ২ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু ঘটে মেধাবী ছাত্র আবু বকর সিদ্দিকের। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এতটাই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল যে, সরকার সমর্থক দৈনিকগুলোও ‘ছাত্রলীগকে সামলান’ শিরোনামে প্রধানমন্ত্রীকে তাগিদ না দিয়ে পারেনি। টেলিভিশনের টকশোতেও ছাত্রলীগের অপকর্মই প্রধান আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু সরকারের এতদিন টনক নড়েনি। এমনকি ছাত্রদল কর্মীর মৃত্যুর পরও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন নিষ্ঠুর মানসিকতার পরিচয় দিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, এটা একটা ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’, ‘এমনটা ঘটতেই পারে’ এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিকই’ রয়েছে! সে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই আবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মীর মৃত্যুতে একেবারে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেছেন। অর্থাত্ অন্য কোনো সংগঠনের কর্মী বা সাধারণ মানুষের মৃত্যুতে ক্ষমতাসীনদের কিছু যায়-আসে না। তাদের মাথা খারাপ হয়ে যায় শুধু ছাত্রলীগের কেউ মারা গেলে। এ যে শুধু কথার কথা নয়, বাস্তবেও তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারুক হত্যাকে কারণ হিসেবে সামনে আনা হলেও সরকারের হঠাত্ এতটা নিষ্ঠুরভাবে তেড়ে ওঠার পেছনে অন্য একটি কারণ রয়েছে। সেটি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফর। এই সফরের সময় ভারতকে অনেক কিছুই দিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের স্বার্থে এটা-ওটা অর্জনের বাগাড়ম্বর শোনা গেলেও বাস্তবে তেমন চেষ্টাই করেননি প্রধানমন্ত্রী। তার ব্যস্ততা ছিল শুধু ভারতকে দিয়ে আসার জন্য। দিয়েও এসেছেন তিনি ভারতের ইচ্ছা ও নির্দেশ অনুসারে। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের শুধু নয়, ভারতকে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রেল ও সড়কপথে পণ্য পরিবহনের সুযোগ-সুবিধাও দিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী। ভারত এখন থেকে আশুগঞ্জ নৌবন্দর ব্যবহার করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য আনা-নেয়া করতে পারবে। এখন কলকাতা ও আগরতলার দূরত্ব ১৫০০ কিলোমিটারের স্থলে কমে হবে ৩৫০ কিলোমিটার। বড় কথা, এর ফলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে মারাত্মকভাবে। মাত্র ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ আমদানির আড়ালে প্রধানমন্ত্রী ভারতকে বাংলাদেশের জাতীয় বিদ্যুত্ গ্রিডের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠারও সুযোগ দিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশের জাতীয় বিদ্যুত্ গ্রিড ব্যবহার করে ভারত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো থেকে পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে বিদ্যুত্ নিয়ে যাবে—যা এতদিন সম্ভব হচ্ছিল না। অন্যদিকে বিদ্যুতের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ভারতের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে। ভারত চাইলে যে কোনো সময় বাংলাদেশে বিদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধ করতে পারবে, বাংলাদেশের করার কিছুই থাকবে না। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের মতো অন্য কোনো বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বার্থে ভূমিকা রাখেননি। শেখ হাসিনা উল্টো এমন এক ‘সীমান্ত হাট’ চালু করতে সম্মতি দিয়ে এসেছেন, যে হাট শুরু হলে ভারতীয় পণ্যের দাপটে বাংলাদেশী পণ্য বাজার হারাবে, বাংলাদেশের শিল্প-কারখানার বিনাশ ঘটবে এবং বাংলাদেশকে সম্পূর্ণরূপে ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে হবে। ভারতীয় পণ্যও কয়েক গুণ বেশি দাম দিয়েই কিনতে হবে।
অর্থাত্ প্রধানমন্ত্রী ভারতকে সব বিষয়ে শুধু দিয়েই আসেননি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং শিল্প-বাণিজ্যসহ অর্থনীতির জন্যও হুমকির সৃষ্টি করে এসেছেন। একই কারণে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে, সম্পাদিত সব চুক্তি ও যুক্ত ঘোষণাকে তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। দলগুলো একই সঙ্গে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতেও শুরু করেছিল। ঠিক তখনই সরকার নিয়েছে আগে আক্রমণের কৌশল। ধারণা করা হচ্ছে, নির্দেশনা এসেছে ভারতের উচ্চ পর্যায় থেকে। একটি উদাহরণ হিসেবে ভারতের অন্যতম থিঙ্কট্যাঙ্ক বি. রমনের কিছু কথার উল্লেখ করা যায়। সাবেক এই আমলা ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর একজন শীর্ষ উপদেষ্টা হিসেবেও পরিচিত। ‘চিরুনি অভিযান’ শুরু হওয়ার মাত্র তিন দিন আগে, ৬ ফেব্রুয়ারি ব্যাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারের ভাষণে বি. রমন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে আওয়ামী লীগ সরকার এবং বাংলাদেশে ভারতের স্বার্থবিরোধী প্রধান শক্তি হিসেবে তুলে ধরেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে সম্পাদিত বিভিন্ন চুক্তির ওপর আলোচনা করতে গিয়ে বি. রমন বলেছেন, চুক্তিগুলো বাস্তবায়নের পথে বিএনপি ও জামায়াত প্রতিবন্ধক হয়ে উঠতে পারে। বি. রমনের মতে, নির্বাচনে ভোটারদের আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়লেও দল দুটির রাজপথে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির ক্ষমতা কমে যায়নি। সুতরাং ভারতের স্বার্থে প্রথমে এমন ব্যবস্থা নেয়া দরকার যাতে বিএনপি ও জামায়াতের আন্দোলনের শক্তি অবশিষ্ট না থাকে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আওয়ামী লীগ সরকারও বি. রমনদের প্রেসক্রিপশন অনুসারেই তত্পর হয়ে উঠেছে। এজন্যই সরাসরি প্রতিপক্ষ না হওয়া সত্ত্বেও শিবিরকে টার্গেট করেছে সরকার। এর পেছনে প্রধান উদ্দেশ্য যে জামায়াত ও বিএনপিসহ দেশপ্রেমিক দলগুলোকে ‘শায়েস্তা’ করা এবং তাদের আন্দোলনের ক্ষমতা ধ্বংস করে দেয়া—সে কথাও গোপন রাখা হচ্ছে না। বোঝাই যাচ্ছে, ভারতকে সবকিছু বাধাহীনভাবে দেয়ার উদ্দেশ্যে সরকার এরপর পর্যায়ক্রমে বিএনপি ও ছাত্রদলকেও দেখে নেবে। ভারতকে দিয়ে আসার বিষয়টি যাতে জনগণের চোখে না পড়ে সেটাই চাচ্ছে সরকার।
ঘটনাপ্রবাহে অন্য কিছু আশঙ্কাজনক তথ্যও প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। এরকম একটি তথ্য হলো, বিদেশি কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা নাকি শিবিরসহ দেশপ্রেমিকদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে অংশ নিচ্ছে। তথ্যটিতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ হলো, ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তার মহাজোটের যে শোচনীয় ভরাডুবি ঘটবে সেকথা বিদেশি কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থাই আগে জানতে পেরেছিল। অভিযোগ রয়েছে, এসব সংস্থার পরামর্শেই শুরু হয়েছিল লগি-বৈঠার ভয়ঙ্কর তাণ্ডব। সে তাণ্ডবে, বিশেষ করে পল্টনের হত্যাকাণ্ডের পেছনে তাদের মদত ছিলো বলে মনে করেন অনেকে। সে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোই এবার আওয়ামী লীগের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ভীতি ও উদ্বেগের কারণ হলো, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ শুধু নয়, ইসরাইলের ‘মোসাদ’ও বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে তত্পরতা চালাচ্ছে।
এখানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাকেন্দ্রিক কিছু তথ্যেরও উল্লেখ করা দরকার। প্রকাশিত খবরে জানা গেছে (নয়া দিগন্ত, ১৬ ফেব্রুয়ারি), শাহ মখদুম হলের প্রভোস্ট ড. দুলাল চন্দ্র রায় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার রাতে সাড়ে ১২টার দিকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগের একটি গ্রুপকে টিভি রুমে অবস্থান করার অনুমতি দিয়ে যান। প্রশ্ন উঠেছে, নিয়ম যেখানে ১২টার সময় টিভি রুম বন্ধ করা সেখানে প্রভোস্ট কেন সাড়ে ১২টার পরও ছাত্রলীগের ওই গ্রুপকে টিভি রুমে অবস্থান করার অনুমতি দিয়েছিলেন? শুধু তা-ই নয়, পুলিশকেও তিনি ছাত্রলীগের গ্রুপটিকে ‘দেখভাল’ করার অনুরোধ করেছিলেন।
দ্বিতীয় তথ্যটি হলো, প্রভোস্ট বেরিয়ে যাওয়ার পরপর মাথায় মাফলার পরা সাত-আটজনের একটি গ্রুপ হঠাত্ শাহ মখদুম হলের গেটে এসে হাজির হয়েছিল। গেটের নিয়ন্ত্রণও তারাই নিয়েছিল। তাদের ভয়ে দুই নিরাপত্তা কর্মী পালিয়ে গিয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছে—মাফলার পরা এই সাত-আটজন আসলে কারা? প্রশ্নের কারণ, নিরাপত্তা কর্মীরাও এর আগে কখনও তাদের দেখেনি। জানা গেছে, এ গ্রুপটি হল গেটের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার কিছুক্ষণ পরই টিভি রুম থেকে হঠাত্ ‘মাগো’, ‘বাবারে’ এবং ‘বাঁচাও’ ধরনের চিত্কার শোনা গেছে। পরে শোনানো হয়েছে ফারুকের মৃত্যুর খবর। সংশয়ের কারণ হলো, সিট দখল নিয়ে গোলমাল হয়েছিল বঙ্গবন্ধু হলে। ফারুক তাহলে কেন শাহ মখদুম হলে গিয়ে নিহত হয়েছে? ফারুকই কি তাহলে ‘মাগো’, ‘বাবারে’ এবং ‘বাঁচাও’ বলে চিত্কার করে উঠেছিল?
তৃতীয় তথ্য হিসেবে এসেছে ম্যানহোলে লাশ পাওয়ার রহস্য। কারণ, নবাব আবদুল লতিফ হল, সৈয়দ আমীর আলী হল এবং শাহ মখদুম হলের অবস্থান মুখোমুখি। রাত সাড়ে ৩টায়ও সেখানে ছাত্রলীগ কর্মীদের পুলিশের গাড়িতে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। পুলিশের পাশাপাশি তত্পর দেখা গেছে মাফলার পরা ওই সাত-আটজনকেও। এমন এক অবস্থায় ধাওয়ার মুখে পালাতে ব্যস্ত শিবিরের কারও পক্ষে লাশ টেনে নিয়ে যেতে পারার প্রশ্ন উঠতে পারে না। তাছাড়া অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সৈয়দ আমীর আলী হলের পেছনে যে সেপটিক ট্যাংকের মধ্যে ফারুকের লাশটি ঢোকানো হয়েছিল সেখানে একটিমাত্র ঢাকনাই খোলা ছিল। আগে থেকে ঠিক করা না থাকলে কারও পক্ষে জানা সম্ভব নয় যে, ওই বিশেষ ম্যানহোলের ঢাকনাই খোলা রয়েছে। অর্থাত্ সবই করা হয়েছে পূর্বপরিকল্পনার ভিত্তিতে। ঘটনাপ্রবাহে বিশেষ করে এসেছে মাফলার পরা সাত-আটজনের প্রসঙ্গ। পর্যবেক্ষকরা এর সঙ্গে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তত্পরতা সংক্রান্ত তথ্যও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তাদের অনুমান, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার তাণ্ডবে যেমন বিদেশি কমান্ডোদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে অভিযোগ রয়েছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারুক হত্যকাণ্ডেও তেমনি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্টতা থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। পর্যবেক্ষকরা উপরের তথ্যগুলোকে মিলিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন।
‘চিরুনি অভিযান’কেন্দ্রিক পরিস্থিতি যে এরই মধ্যে আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে সে কথা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না। ধারণা করা হচ্ছে, ভারতের সঙ্গে এবং সর্বতোভাবে ভারতের স্বার্থে সম্পাদিত বিভিন্ন চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়নকে বাধাহীন করার জন্য বিরোধী দলের ওপর দমন অভিযান চালানো আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য আসলে অবশ্যপালনীয় কর্তব্য হয়ে পড়েছে। সরকারকে ভারত সে সিগন্যালই দিয়েছে। বি. রমনের মতো ভারতের নীতিনির্ধারকরাও কথাটা খোলামেলাভাবে বলেছেন। তারা একই সঙ্গে বাংলাদেশে চুক্তির বিরোধিতাকারীদেরও চিহ্নিত করে দেখিয়ে দিয়েছেন। চুক্তিগুলো যাতে বিরোধিতার মুখে না পড়ে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা যায় সে জন্যই কি ভারতের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারও ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছে? পর্যবেক্ষকরা অবশ্য ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, সংবিধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করে ফ্যাসিবাদী পন্থায় হামলা-নির্যাতন চালানোর পরিণতি কোনো যুগে কোনো দেশে কোনো সরকারের জন্যই সুফল বয়ে আনেনি। ভিন্ন মতালম্বীর সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার পদদলিত করে দেশপ্রেমিক দল ও সংগঠনের বিরুদ্ধে যে নিষ্ঠুর অভিযান চালানো হচ্ছে, তার পরিণতিও এক সময় ধ্বংসাত্মকই হয়ে উঠতে পারে।
লেখক : সাংবাদিক
ই-মেইল : shahahmadreza@yahoo.com
GmGgB Lv‡Z wewb‡qv‡Mi ZvwM` Avw_©K cÖwZôvb¸‡jvi f‚wgKv ivL‡Z n‡e | |||||||||
Avw_©K cÖwZôvb¸‡jv hw` Zv‡`i FY mnvqZv, FY Av`vq I my`nvi mnbkxj ch©v‡q iv‡L Zvn‡j Avkv Kiv hvq, G †`‡ki D`¨gx ZiæY-ZiæYxiv mwZ¨B A_©‰bwZK wecøe NUv‡Z cvi‡e| | |||||||||
![]() evsjv‡`‡ki kÖgevRv‡i cÖwZ eQi Ab~¨b 10 jvL †jvK cÖ‡ek K‡i| e„nr, ÿz`ª I gvSvwi wk‡í GB kÖgevRv‡ii mvgvb¨ As‡kiB ¯’vb nq| G‡Z †`‡k †eKv‡ii msL¨v R¨vwgwZK nv‡i evo‡Q| we‡`‡k kÖwgK ißvwb K‡i †eKvi msL¨vi jvMvg †U‡b ivLv m¤¢e n‡”Q bv| †`‡k Kv‡Ri m¤¢vebv m„wó n‡j †eKvi n‡q hvIqv ZiæY-ZiæYxiv †`‡ki A_©‰bwZK Dbœqb I wb‡Ri Dbœq‡b f‚wgKv ivL‡Z cvi‡Zv| wKš‘ ÿz`ª I gvSvwi wkí Ges K…wl Lv‡Z †eKvi Rb‡Mvôxi AskMÖnY Avkvbyiƒc bv nIqvq Zviv †`‡ki `vq wn‡m‡e MY¨ n‡”Q| G Ae¯’vq evsjv‡`k e¨vs‡Ki Mfb©i W. AvwZDi ingvb ÿz`ª I gvSvwi wkí Lv‡Z (GmGgB, ¯§j A¨vÛ wgWj G›UvicÖvBR) AwaK nv‡i wewb‡qvM Kivi Rb¨ Avw_©K cÖwZôvb¸‡jvi cÖwZ AvnŸvb Rvwb‡q‡Qb| GQvov wZwb K…wl Lv‡Z e¨vcK wfwˇZ FY †`qvi Rb¨I e‡j‡Qb| Mfb©‡ii G civgk© ev AvnŸv‡bi g~‡j i‡q‡Q †`‡k ÿz`ª I gvSvwi wk‡íi m¤úÖmviY Ges K…wl Lv‡Z Av‡iv Dbœqb| GUv wVK †h, evsjv‡`‡k †hfv‡e ÿz`ª I gvSvwi wk‡íi m¤úÖmviY I G‡Z Kg©ms¯’v‡bi K_v wQj Zv nqwb| G‡Zvw`b ch©šÍ †Kb nqwb, †m cÖkœ GLb IVv‡bv AevšÍi| Zvi‡P‡q AvMvgx‡Z Kxfv‡e G Lv‡Zi m¤úÖmviY n‡e, †m wel‡q meviB g‡bv‡hvM †`qv `iKvi| A‡b‡K G Lv‡Zi m¤úÖmviY bv nIqvi †cQ‡b e„nr wk‡íi e¨vswKs wbqg I my`nv‡ii m‡½ ÿz`ª I gvSvwi wk‡íi wbqgKvbyb GKiKg nIqv‡K `vqx K‡i‡Qb| Avevi A‡b‡K GmGgB Lv‡Z bvix D‡`¨v³v‡`i ¯^í AskMÖnY‡KI `vqx K‡i‡Qb| hv‡KB `vqx Kiv †nvK bv †Kb, GLb mgq G‡m‡Q Pig †eKviZ¡ Ae¯’vi jvMvg †U‡b aivi Rb¨ ÿz`ª I gvSvwi wk‡í Ges K…wl Lv‡Z wkwÿZ ZiæY-ZiæYx‡`i e¨vcK AskMÖn‡Yi j‡ÿ¨ Kvh©Ki c`‡ÿc †bqv| Avi G c`‡ÿ‡ci †cQ‡b me‡P‡q †ewk f‚wgKv ivL‡Z cv‡i Avw_©K cÖwZôvb¸‡jv| e„nr wkí cÖwZôvb evsjv‡`‡k †h †bB, Zv ejv hv‡e bv| G Lv‡Z Kg©ms¯’vbI nq cÖPzi| wKš‘ GKwU e„nr wkí cÖwZôv‡bi Drcv`‡b †h‡Z wZb-Pvi eQi mgq †j‡M hvq| ZvQvov Drcv`‡b hvIqvi ci e„nr wkí cÖwZôvbwU jvfRbK bv n‡j FY †Ljvwc n‡Z _v‡K| GKmgq †`Lv hvq, †Ljvwc F‡Yi fv‡i e„nr cÖwZôvbwU eÜ n‡q hvq Ges †eKvi n‡q c‡o †mLv‡b Kg©iZiv| Ab¨w`‡K ÿz`ª I gvSvwi wk‡í wewb‡qvM Ki‡Z nq Kg, Lye `ªæZ †m¸‡jv Drcv`‡b Avm‡Z cv‡i Ges †ewkifvM †ÿ‡ÎB GmGgB wkí jvfRbK nIqvq Kg©ms¯’vb Kg n‡jI ûU K‡i †KD †eKvi nq bv| GKRb wkwÿZ ZiæY ev ZiæYx Avw_©K cÖwZôv‡bi mnvqZvq ÿz`ª I gvSvwi wkí ev K…wl Lvgvi cÖwZôv K‡i hLb wb‡R ¯^vej¤^x nq Ges AšÍZ 20-30 Rb †jv‡Ki Kg©ms¯’vb K‡i, ZLb Zvi †`Lv‡`wL Av‡iKRb wkwÿZ †eKviI DØy× nq| Gfv‡e me wkwÿZ †eKviB hw` DØy× n‡Z _v‡K Ges Avw_©K cÖwZôvb¸‡jv hw` Zv‡`i FY mnvqZv, FY Av`vq I my`nvi mnbkxj ch©v‡q iv‡L Zvn‡j Avkv Kiv hvq, G †`‡ki D`¨gx ZiæY-ZiæYxiv mwZ¨B A_©‰bwZK wecøe NUv‡Z cvi‡e| Avi G Rb¨ evsjv‡`k e¨vs‡Ki Mf©bi Avw_©K cÖwZôvb¸‡jvi cÖwZ †h AvnŸvb Rvwb‡q‡Qb, Zvi ev¯Íevqb cÖ‡qvRb| G¸‡jv ev¯Íevq‡bi Rb¨ Avw_©K cÖwZôvb f‚wgKv ivL‡e| G cÖZ¨vkv wkwÿZ ZiæY-ZiæYx‡`i g‡Zv Avgv‡`iI|
|